” ছেলে বেলায় জেল মাঠে টেনিস বল নিয়ে খেলতাম l মাঠের পাঁচিলের ইটের গায়ে লেখা ছিলো “জি পাল ” মনে করতাম ওই ইটে মোহনবাগানের কিংবদন্তী খেলোয়াড় গোষ্ঠ পালের নামাঙ্কিত করা হয়েছে l প্রতিদিন ওই ইটে প্রনাম করে মাঠে নামতাম , ছেলেবেলায় খেলা দেখার চাইতে ,খেলার আগ্রহই বেশী ছিলো l পড়তাম সাউথ সুবার্নন স্কুলে , পঞ্চম কি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি , একদিন স্কুল পালিয়ে হেঁটে সোজা চলে গেলাম মোহনবাগান মাঠে , রেমপার্টে দাঁড়িয়ে বেড়ার ফাঁক দিয়ে সেই প্রথম ময়দানের ফুটবল খেলা দেখলাম l
আস্তে আস্তে ফুটবলের প্রতি আকর্ষন বেড়েই চললো l খেলতাম মোটামুটি , কলকাতা লীগে দ্বিতীয় বিভাগে ইয়ং বেঙ্গলে যোগ দিলাম l জেল মাঠে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচে আমার খেলা দেখে একদিন বলাইদা (বলাই দাস চ্যাটার্জী )বললেন ” কিরে মোহনবাগানে খেলবি ?” আকাশ থেকে পড়লাম , ভাবলাম বলাই দা ঠাট্টা করছেন l বলাইদার মনে ছিলো অন্য ভাবনা l তারপর ফুটবল মাঠে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে ফুটবল এবং অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় বলাই দা ছায়ার মতো লেগে থাকতেন l
দাদা অক্ষয় সিংহ খেলতেন মোহনবাগানে , তিনি বলতেন , ” এতো অল্প বয়সে মোহনবাগানে খেলতে যেও না , চোট লেগে যাবে ” কালীঘাটের হয়ে ৪৬ সালে প্রথম বিভাগে লীগে খেলি , আমার বয়স কত — ১৫ কি ১৬ , পড়াশুনায় ভালো ছিলাম , বছর শেষ হতে না হতেই ভবানীপুর ক্লাবের নানী মিত্র ডেকে বললেন ” তুমি সামনের বছর থেকে ভবানীপুরের হয়ে খেলো , তোমাকে ডান্ডি (স্কটল্যান্ডের একটি শহর ) পাঠাবো জুট ট্যাকনোলজি পড়তে ” বাড়ীর সবাই একথা শুনে খুব খুশী হলেন l পরের দিন মোহনবাগান মাঠে পুলিশের বিরুদ্ধে খেলা দেখতে গেলাম , দূর থেকে দেখেই বলাইদা কাছে ছুটে এলেন , “তাড়াতাড়ি চল , তোকে আজ খেলতে হবে ” তাঁবুতে গেলাম , উত্তরপ্রদেশের সি এস দুবে জার্সী পরে খেলার জন্যে তৈরী হয়েছে , তাকে জার্সী খুলতে বলা হলো , সে একবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো ,” ও তুমি এসে গেছো , বলাইদা তোমার কথাই বলেছিলো , ভাই আজ কিন্তু গোল করতে হবে ” সবুজ মেরুন জার্সি পরে প্রথম খেলাতেই হ্যাটট্রিক করলাম , কি আনন্দ ! মোহনবাগানে খেলার স্বপ্ন এভাবেই সফল হল l যাওয়া হল না ডান্ডি l দাঙ্গা বিধ্বস্ত ৪৭ সালের লীগে মোহনবাগানের হয়ে ৬৭ গোল করেছিলাম l আই এফ এ শিল্ড সেমিফাইনালে আমার করা গোলেই মোহনবাগান , মোহামেডানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলো…….কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার হয়ে খেলতে গিয়ে পা ভেংগে গেলো আমার l পা ভাঙ্গার পর ধীরে ধীরে খেলা থেকে অবসর নিয়ে কোচিংয়ের নজর দেই….মোহনবাগান দলের কোচ হবার প্রস্তাব আসা মাত্রই রাজী হয়ে যাই , এবং এর জন্যে এক পয়সাও নেইনি , ৬৭ তে প্রথম কোচিংয়ের জন্যে ডাক পাই মোহনবাগান থেকে , তারপর ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত কোচিং করাই…..আমি গর্বিত আমি মোহনবাগান শতবর্ষের দলের কোচিং করিয়েছি…..যদিও শারীরিক কারনে মাঠে যেতে পারিনি ঠিক মতো…মোহনবাগান মোহনবাগানই , শৈশবে দাদুর কাছে শোনা মোহনবাগানের রূপকথার কাহিনী হৃদয়ের চিত্রপটে জ্বলজ্বল করতো সবসময়……””
আমার হৃদয়ের কথা এতক্ষন শুনলেন , ভাবছেন আমি কে ?
আপনারা আমাকে চেনেন , আমি আপনাদের অরুন সিংহ……একজন মোহনবাগানি…
Written by Debu Datta