১৯১১ সালের শিল্ড জয়ী মোহনবাগান দলের সদস্য ছিলেন মনোমোহন মুখার্জী , ১৯৩৯ সালের প্রথম লীগ জয়ী মোহনবাগানের অধিনায়ক ছিলেন তাঁরই পুত্র বিমল মুখার্জী l পিতা পুত্রের এই ধরনের সাফল্য মোহনবাগান ক্লাবের ইতিহাসে আর নেই l ১৯৩৯ এর মার্চ মাসে বিমল বাবুর সঙ্গে বাকী জীবনের জন্য গাঁটছড়া বাঁধা হয়েছিলো মাত্র ১৬ বছর বয়সী শান্তি মুখার্জির l তখন জানতেনই না , স্বামী কি খেলেন , কেনো খেলেন , কোথায় খেলেন , বুঝতেন না এবং খোঁজও রাখতেন না মোহনবাগান কি l হটাত্ একদিন শ্বশুর মশাই ডেকে বললেন ,””বৌমা , আজ তোমার পরীক্ষা , আজ বুঝব ,তুমি পয়া না অপয়া “”l মনমোহনের কথার কোনও মানে সেই মুহূর্তে বুঝতে পারেননি শান্তি দেবী , শুধু অবাক হয়ে দেখেছিলেন , তাঁর স্বামী বাবার পায়ের ধুলো মাথায় ঠেকিয়ে বাড়ীর ঠাকুরের ফুল সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে গেছিলেন l অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠেছিলো শান্তি দেবীরl কিসের পরীক্ষা ? কখন জানা যাবে সেই পরীক্ষার ফল ? কোন উত্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হয়েছিলেন ঈশ্বরের , বার বার ঠাকুরকে বলেছিলেন “”আমি যেন পরীক্ষায় পয়া সাব্যস্ত হই “” বিকেল বেলা হটাত্ শ্বশুরমশায়ের চিত্কারে সম্বিত ফিরে পেয়েছিলেন শান্তি দেবী l বিরাট এক মিষ্টির থালা তাঁর বৌমাকে উপহার দিয়ে মনোমোহন বলেছিলেন ,” বৌমা , খোকা লীগ জিতেছে , তুমি খুব পয়া , মাগো , তুমি আমার ঘরের লক্ষ্মী “” l স্বামী কি জিতেছে তখন তা ভাবার সময় বা অবস্থা ছিলো না শান্তি দেবীর l নিজে পয়া সাব্যস্ত হওয়ায় ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছিল l তবে সেদিন রাতে স্বামীর মুখে ১৯১১ , মনোমোহন মুখার্জী , মোহনবাগান নিয়ে প্রায় সারারাত গল্প শুনে –মোহনবাগান , ফুটবল খেলা , লীগ জয় সম্পর্কে তাঁর আগ্রহের জন্ম , পরবর্তী কালে শ্বশুরের মুখে শুনেছিলেন ১৯১১-র শিল্ড জয়ের গল্প l বিমল মুখার্জীর পুত্র নিখিল মুখার্জীও পাওয়ার লীগ খেলেছেন সবুজ মেরুন জার্সী গায়ে দিয়ে , কিন্তু তারপর আঘাতের জন্য অবশ্য বেশ তাড়াতাড়ি মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন l শান্তি দেবী জীবনে একবারই বিমল মুখার্জীর সাথে মোহনবাগান তাঁবুতে পা রেখেছিলেন , তাও বিমল মুখার্জী খেলা ছাড়ার পর l মোহনবাগান তাঁবুতে ঢোকার সময় নিজের অজান্তেই গেটে হাত দিয়ে প্রনাম করে ফেলেছিলেন শান্তি দেবী l নিজের শ্বশুর ও স্বামীর তীর্থস্থান বলে কথা! একটা অদ্ভুত শিহরনের ঝলকানি যেন ছুঁয়ে গেছিলো তাঁকে l ১৯১১সালের শিল্ড জয়ী নায়কদের সামনে শান্তি মুখার্জী ….
Written by Debu Datta